হাজী মুহম্মদ মহসীন ১৭৩২ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলীতে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম ছিল মুহম্মদ ফয়জুল্লাহ। মায়ের নাম ছিল জয়নাব খানম । তাদের আদি নিবাস ছিল পারস্যে। হাজী মুহম্মদ মহসীনের পূর্বপুরুষ ভাগ্য অন্বেষণে হুগলী শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। মহসীনের শিক্ষাজীবন শুরু হুগলীতে। তাঁর গৃহশিক্ষক আগা সিরাজি ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি তাঁর কাছে আরবি-ফারসি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ভোলানাথ ওয়াদ নামে একজন সঙ্গীতবিদের কাছে সঙ্গীত সেতার বাজানো শেখেন। তাঁর উচ্চশিক্ষা শুরু হয় মুর্শিদাবাদে। পিতার মৃত্যুর পর তিনি হুগলী ফিরে আসেন এবং ১৭৬২ সালে দেশ ভ্রমণে বের হন। তিনি মক্কা, মদিনা গমন করেন এবং পবিত্র হজ পালন করেন। আরব, মিশর, পারস্য ভ্রমণ করে তিনি সাতাশ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি এবং ইতিহাস ও বীজগণিতে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। ১৮০৩ সালে তাঁর একমাত্র বোনের মৃত্যু হলে নিঃসন্তান বোনের বিশাল সম্পত্তির মালিক হন তিনি। তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। তখন বাংলার মুসলমানদের ছিল চরম দুর্দিন। অর্থ ব্যয় করে লেখাপড়ার ক্ষমতা তাদের ছিল না। তিনি তাঁর সমুদয় অর্থ শিক্ষা বিস্তার চিকিৎসা এবং দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করেন।
তিনি হুগলীতে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর প্রভৃতি স্থানের মাদ্রাসার উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে প্রচুর অর্থ দান করেন। মৃত্যুর ছয় বছর পূর্বে ১৮০৬ সালে একটি ফান্ড গঠন করে জনহিতকর কার্যে সমস্ত সম্পত্তি দান করেন । মহসীন ফান্ডের অর্থে তাঁর মৃত্যুর পর ১৮৩৬ সালে হুগলী মহসীন ফান্ড, হুগলী দাতব্য চিকিৎসালয় এবং ১৮৪৮ সালে হুগলীতে ইমামবাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া হুগলী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে মাদ্রাসা ও ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়। মহসীন ফান্ডের বৃত্তির অর্থে হাজার হাজার মুসলমান তরুণ উচ্চ-শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। এর মধ্যে বাংলার মুসলমান সমাজকে যাঁরা পাশ্চাত্য শিক্ষার পথ দেখিয়েছিলেন, তাঁদের অগ্রদূত সৈয়দ আমির আলীও ছিলেন। এভাবে তিনি তাঁর মৃত্যুর পরও বাঙালি মুসলমানদের জন্য শিক্ষার পথ সুগম করে যান। এই দানশীল বিদ্যানুরাগী মহাপুরুষ ১৮১২ সালে ২৯শে নভেম্বর হুগলীতে পরলোকগমন করেন ।
আরও দেখুন...